উপরে যান

শনিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১২

নকলা উপজেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

দর্শনীয় স্থানঃ-
রুনীগাঁয়ে মোঘল আমলের গায়েবী মসজিদ, নারায়নখোলার ঐতিহাসিক বেড় শিমুলগাছ, চন্দ্রকোনায় মৃগীনদীর উপর নির্মিত ২৫০ মিটার র্দীঘ সেতু এবং চন্দ্রকোনার অদূরে অবস্থিত রাণীগঞ্জ স্লুইচগে ট। বরষকালে এখানে দৃষ্টি নন্দন মনোরম সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব দর্শনীয় স্থানের উৎকর্ষ সাধন করলে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।নকলা উপজেলার বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের বিবরণ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।



প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য ও স্থাপত্য নিদরশন সম্পর্কিত তথ্যাদিঃ-
গাজীর দরগাহঃ ঘল স্থাপত্যের এক অনুপম স্থাপত্য নিদর্শন রুনী বিবিরি মাজার। বর্তমানে সেটির নাম দরগাহ বাজার । এ মাজারটি নিয়ে নানা কিংবদন্তী রয়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের লৌকিক বিশ্বাস এটি একটি মসজিদ যা জীন পরী মিলে কোন এক রাতের মধ্যে নির্মাণ করতে চেয়েছিল, হঠা করে তা পাশের বাড়ীরি এক মহিলা দেখে ফেলে। জীন পরীরা ঐ মহিলাকে বাড়ীল অন্যান্য লোককে তা জানাতে নিষেধ করে। জানালে সে মহিলা মারে যাবে বল তারা তাকে ভয় ভীতি দেখায়। ঐ মহিলা তা শুনে বাড়ীর সকলকে বলে দেয়, তক্ষণাত বাড়ীর লোকজন বাতি নিয়ে দেখতে আসলে আসলে জীন পরীরা অর্ধেক কাজ সমাপ্ত করে চলেযায়। এবং ঐ মহিলাটিও সেই রাতেই মারা যায়। বর্তমানে মাজারটি অর্ধনির্মিত জরাজীর্ণ অবস্থায় এক বিশাল বটবৃক্ষ বেষ্টিত অবস্থায় রয়েছে। যাতে আছে সরু পাটার মাত ইট, যা খুবই কারুকার্যপূর্ণ। ফটক দ্বারে বড় বড় পাথর। এর যে শিল্পিত রুপ তা চোখে না দেখলে অনুমান করা দূরুহ। এ অঞ্চলের লৌকিক বিশ্বাস এমনটি হলেও বাস্তবে তার নির্মাণ ইতিহাস অন্য রকম। মোঘল  পরিবারের  এক রমণী যার নাম রুনী বেগম।








তার একটি পুত্র সন্তান ছিল। তকালীন সময়ে জলদস্যুদের ছিল খুব উপদ্রব। জলদস্যুরা রুণী বেগমের একমাত্র পুত্রকে মুক্তিপণের আশায় নৌপথে আরাকানে (বর্তমান চট্টগ্রাম) বন্দী করে নিয়ে যায়। রুণী বেগম পাগল পাড়া হয়ে পুত্রকে মুক্তির আশায় চার বেয়ারার পালকি নিয়ে মোঘল রাজার দরবার থেকে সোজা পথে আরাকানের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। দীর্ঘ যাত্রায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বর্তমান দরগার বাজার স্থানে যে মাজারটি অবস্থিত রুণী বেগম সে স্থানে েএসে কয়েকদিন অসুস্থ থাকার পর মৃত্যু বরণ করেন। বর্তমান বাজার স্থানে তার সমাধি। তৎকালীন  মোঘল সম্রাটের নিকট এ সংবাদ পৌঁছালে তিনি সেখান থেকে কাঠ মিস্ত্রি সহ পাইক পেয়াদা প্রেরণ করে ফরমান জারী করেন যে, রুনী বেগমের মাজার এলাকার নাম রুণী বেগমের নাম অনুসারে রুণী গাঁও হবে। তখন থেকে সে গ্রামের নাম রুনী গাঁও। আরো জনশ্রুতি আছে যে, শের শাহের আমলে দিল্লী হতে আরকান পর্যন্ত যাতায়াতের পথ ধরে তকালীন একমাত্র বাহন একটি ঘোড়ার এক দিনের অতিক্রম দুরত্বে একটি করে সরাই খানা নির্মাণ করা হয়েছিল । এ মাজার স্থলে ছিল তারই একটি সরাই খানা। এখানে  তকালীন মোঘল পরিবারে রুণী বেগম নামে এক মহিলা অবস্থান করেন এবং অসুস্থ হয়ে সেখানেই মারা যান। সে থেকেই এ গ্রামের নাম রুণী গাঁও এবং রুণী বেগমের মাজারই বর্তমান গাজীর দরগাহ মাজার। মোঘল দের পতনের পর এটি সংরক্ষণের বিষয়ে কেউ পদক্ষেপ নেয় নি। প্রতি বছর ১০ মহরম মাজার প্রাঙ্গনে মেলা, জারী গান, বাউল সঙ্গীত ও উরশ হয়ে থাকে। এলাকাবাসী প্রতি বছরে এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে।

নারায়ন খোলা বেড় শিমুল গাছঃ গাছটির ব্যাস ৪২ গজ । গাছটি কয়েকশত বছরের পুরাতন বলে এলাকাবাসীর মুখে শোনা যায়। একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করা হলে গাছটির কান্ডের পশ্চিম পার্শ্বে হাতি সদৃশ্য, পূর্ব পার্শ্বে বাঘ ও সিংহের সদৃশ্য, দক্ষিণ পার্শ্বে কুমিরের সদৃশ্য এবং উত্তর পার্শ্বে নৌকার বৈঠা ও সাপের সদৃশ্য বলে মনে হয়। 















গাছটির যে কোন একটি শাখা ধরে নাড়া দেয়া হলে সমগ্র গাছ নড়ে উঠে। গাছটির আনুমানিক উচ্চতা ৮০-১০০ ফুট এবং গাছটি প্রায় ১.০০ বিঘা জমি জুড়ে বিস্তৃত। ইতিমধ্যে গাছটিকে নিয়ে এলাবাসীর গভীর কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে।দেশের বিভিন্ন স্থান হতে পুরাতন এ গাছটি দেখার জন্য অসংখ্য লোকজন জড়ো হয়। শেরপুর জেলা পরিষদ ও নকলা উপজেলা পরিষদ গাছটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখে উক্ত বেড় শিমুল গাছের প্রাঙ্গনে মেলা বসে। 

 বিবির দরগা :

 


বিনোদন উৎসব সংক্রান্ত তথ্যাদি :

চড়ক মেলা : হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের চড়ক পূজা উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ৩০ চৈত্র মাসে চড়ক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। লোক মুখে শোনা যায় বহু আগে থেকেই এই মেলার গনপদ্দী পোদ্দার বাড়ীর নিকটে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। উক্ত চড়ক মেলা উপলক্ষ্যে লোকজন রঙ বেরঙ্গের নানা রকম দ্রব্য সামগ্রীর পসড়া সাজিয়ে বসে। চড়ক গাছের তৈরী নাগর দোলা এই মেলার অন্যমত প্রধান আকর্ষণ। উক্ত মেলা মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অায়োজন হলেও মুসলমানসহ সব সম্প্রদায়ের লোকজন উক্ত মেলায় অংশ গ্রহণ করে থাকে। উক্ত মেলা উপলক্ষ্যে সমগ্র এলাকায় উসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।


স্বাধীনতা দিবস মেলা : বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিবস ২৬ মার্চের দিন গনপদ্দী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে দিন ব্যাপী স্বাধীনতা দিবস মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। লোক মুখে শোনা যায় অনেক অগে থেকেই উক্ত মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। উক্ত মেলা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ধরণের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে লাঠি বাড়ি খেলা, সাইকেল দৌড়, ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা উল্লেখযোগ্য। উক্ত মেলা উপলক্ষ্যে ব্যপক উসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।